মোস্তাফিজের ‘পাগল করে দেওয়া’ বোলিংয়ের প্রশংসা লক্ষণদের মুখে

 ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার টুইটটাই অনেক কিছু বলে দেয়।


বিজ্ঞাপন
মোস্তাফিজ
মোস্তাফিজ
ছবি: এএফপি

মিরপুরে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে কাল অস্ট্রেলিয়াকে ১০ রানে হারিয়ে পাঁচ টি-টোয়েন্টির সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ফেলেছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়াকে কোনো সিরিজে হারানো গেল! কাল ম্যাচসেরা স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশকে কোনোরকমে লড়াই করার মতো পুঁজি এনে দেওয়া মাহমুদউল্লাহ। বাংলাদেশের ১২৭ রানের ৫২-ই এসেছে টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের ব্যাট থেকে। কিন্তু এই অল্প রান তাড়া করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া যে ৬ উইকেট হাতে রেখেও ১১৭ রানে থেমে গেল, সে কৃতিত্বের সবচেয়ে বড় দাবিদার তো মোস্তাফিজই!

৪ ওভারে মাত্র ৯ রান দেওয়া কিপ্টে বোলিং তো আছেই, ২৪ বলের মধ্যে ডট বলই দিয়েছেন ১৫টি! ডট বলের হিসাবে গেলে অবশ্য নাসুম আহমেদও একই কৃতিত্বের দাবিদার, ৪ ওভারে ১৯ রান দিলেও নাসুমও ১৫ বলে অস্ট্রেলিয়ানদের কোনো রান নিতে দেননি। তবে মোস্তাফিজের স্পেলের বিশেষত্ব, চার বা ছক্কা হাঁকিয়ে অস্ট্রেলিয়ানদের একটু চাপমুক্ত হতে দেননি।

বাউন্ডারি তো পরের কথা, মোস্তাফিজের কোনো বলে ১-এর বেশি রানই হয়নি। তাঁর ২৪ বলের স্পেলটা তাই দেখাচ্ছে কম্পিউটারের বাইনারী কোডের মতো - ০ ১ ১ ১ ০ ০ ১ ০ ০ ০ ০ ০ ০ ১ ১ ১ ১ ০ ০ ১ ০ ০ ০ ০।

পুরো ইনিংসেই মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন, তবে এর মধ্যেও মোস্তাফিজ সবচেয়ে বেশি মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন ১৯তম ওভারে! অস্ট্রেলিয়ার তখন জয়ের জন্য ১২ বলে ২৩ রান দরকার, হাতে ৬ উইকেট, ক্রিজে ২ বলে ৫ রান করে ফেলা ড্যান ক্রিস্টিয়ানের সঙ্গে আছেন এরই মধ্যে ১০ বল খেলে ফেলা উইকেটকিপার অ্যালেক্স ক্যারি (সে সময়ে তাঁর রান ছিল ১১)। এমন পরিস্থিতিতে মোস্তাফিজ কী করলেন? পুরো ওভারে রান দিলেন মাত্র একটি! শেষ ওভারে তাই মেহেদী হাসানের জন্য সমীকরণটা দাঁড়ায়, ৬ বলে ২২ রান নিতে দেওয়া যাবে না অস্ট্রেলিয়াকে। মেহেদী ১১ রান দিলেন।

এমন দিনে মোস্তাফিজের প্রশংসায় ভাসবে চারিদিক, তা অনুমিতই। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ একটা ছবিতে মোস্তাফিজের দিকে দেখালেন, অনুচ্চারে যেন বোঝালেন, জয়ের আসল নায়ক মোস্তাফিজই! পরে সংবাদ সম্মেলনেও বললেন, মোস্তাফিজের বোলিং স্পেলটা ‘৫ উইকেটের স্পেলের চেয়ে কোনো অংশে কম বলব না।’

ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো মোস্তাফিজকে কুর্নিশ জানিয়ে টুইটে লিখেছে, ‘উইকেট না নিয়েও কীভাবে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে হয়, সেটার মাস্টারক্লাস দেখা গেল।’

ভারত থেকেও মোস্তাফিজ-বন্দনা চলল টুইটারে। ভারতের ব্যাটিং কিংবদন্তি লক্ষণের টুইট, ‘অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের প্রথম সিরিজ জেতায় বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন। ফিজকে নিজের সেরা ছন্দে ফিরতে দেখে ভালো লাগছে। কী চোখধাঁধানো বোলিং পারফরম্যান্স! বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ভালোবেসে যাওয়া সমর্থকদের জন্যও খুশি লাগছে।’

আরেক ভারতীয় সাবেক ক্রিকেটার ওয়াসিম জাফর টুইটে লিখেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম সিরিজ জয়ে বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন। মোস্তাফিজ কী পাগল করে দেওয়া স্পেল করল! ৪-০-৯-০!’ মাথা ঘুরছে—এমন একটা ইমোজিতে শেষ টুইটে জাফর লিখেছেন মোস্তাফিজের ১৯তম ওভারটির কথাও, ‘ম্যাচ যখন সুতোয় ঝুলছে, ওই অবস্থায় ১৯তম ওভারে মাত্র ১ রান দিয়েছে সে!’

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন ম্যাচেই অবশ্য ভালো বোলিং করেছেন মোস্তাফিজ। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ১৬ রানে ২ উইকেট নেওয়ার পর দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৩ উইকেট নিয়েছেন ২৩ রান দিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার অ্যাশটন অ্যাগার দ্বিতীয় ম্যাচের পর মোস্তাফিজকে নিয়ে বিস্ময় জানিয়ে বলেছিলেন, ‘সে একজন অবিশ্বাস্য বোলার। এককথায় দুর্দান্ত। ওই স্লো বলটা করার যে সামর্থ্য তাঁর, তা চোখধাঁধানো।’

ক্রিকেট থেকে আরও পড়ুন
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post