বাবার আদর-স্নেহ কেমন, তা জানে না বুশরা আহমেদ। জন্মের আগেই বাবাকে হারায় সে। মেয়ে কষ্ট পাবে বলে বুশরার মা স্বামীর প্রসঙ্গ খুব একটা তোলেন না। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের বছরখানেক আগেই পুরান ঢাকার ছেলে বিল্লাল হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয় মুন্সিগঞ্জের মেয়ে লাকি আক্তারের। সংসারও ঠিকমতো করতে পারেননি।
১৭ বছর আগের এই দিনে লাকি আক্তার বাবার বাড়িতে ছিলেন। তখন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা তিনি। স্বামী বিল্লালেরও সেদিন শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দলের সমাবেশ থাকায় পরদিন যাবেন বলে স্ত্রীকে জানিয়ে দেন। একটি গাড়ি মেরামতের দোকান ছিল তাঁর। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কর্মীও ছিলেন।লাকি বলছিলেন, ‘২০০৪ সালের ২১ আগস্ট সন্ধ্যার সময় এলাকার এক দেবর ফোন করে জানায়, হামলা হইছে, বিল্লাল হাসপাতালে। তিন দিন পর শুনি, তিনি মারা গেছেন। আমার মেয়েটা বাবার মুখ আর দেখতে পারল না।’
লাকি আক্তার আর বিয়ে করেননি। মা-বাবার সংসারেই থেকেছেন। এ বছর মা-বাবা দুজনকেই হারিয়েছেন। মেয়ে বুশরা এখন কলেজে পড়ে। আওয়ামী লীগ থেকে সহযোগিতা পেয়ে যাচ্ছেন লাকি। মিরপুরে একটি ফ্ল্যাটও পেয়েছেন। লাকি আক্তার বলেন, তিনি অভাবে নেই। কিন্তু মানুষটার অভাব সারা জীবনই থাকবে।
যন্ত্রণায় মিজি মনিরএকাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন মিজি মনির হোসেন (৬৭)। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যুবলীগের কর্মী হন। এরপর স্বেচ্ছাসেবক লীগে যোগ দেন। মিজি মনির বলেন, মুন্সিগঞ্জে তাঁর পৈতৃক বাড়ি ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে বিভিন্ন সরকারের আমলে ৬৭টি মামলার আসামি ছিলেন। মামলার পেছনে সব জমি খুইয়েছেন। নব্বইয়ের পর থেকে শনির আখড়াতেই থাকেন।২০০৪ সালে মিজি মনির ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি ছিলেন। ২১ আগস্ট কর্মীদের নিয়ে আগেই সমাবেশস্থলে চলে যান। কর্মীদের দিয়ে মূল মঞ্চের চারপাশে বেষ্টনী গড়ে তোলেন। মিজি মনির বলেন, ‘আসরের আজানের পরেই হঠাৎ করে মনে হইল বোমা পড়ছে। পরে দেখি গ্রেনেড। তারপর আর কিছু মনে নাই।’
২১ আগস্টের হামলায় বাঁ পা ভেঙে যায় মিজি মনিরের। এখনো ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটতে হয়। মাথার নিচ থেকে পুরো পিঠে স্প্লিন্টার। এখন বাঁ চোখেও সমস্যা হচ্ছে। চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করতে বলেছেন।
দল থেকে দুই দফায় টাকা পেয়েছেন। তা ব্যাংকে রেখে মাসে যে আয় আসে, তা দিয়েই বাসাভাড়াসহ সংসার চালিয়ে নিচ্ছেন। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে আলাদা থাকেন। ছোট ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর সংসার।
নিজের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে মিজি মনির বলেন, ‘এখনো শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন নিয়ে ঘুরি। রাতে ব্যথায় ঘুমাইতে পারি না।