ডোরা কাঠবিড়ালির কথা

 ডোরা কাঠবিড়ালির কথা



বিজ্ঞাপন

কাঠবিড়ালির ছানা চারটি মাটি থেকে ৪–৫ ফুট ওপরে স্থির থেকে দেখছে মা-বাবার কাণ্ড। পুঁচকে লেজ নাচছে বারবার। বারবার একটু ওপর-নিচ করছে আর যোগ দিতে চাইছে মজার খেলায়। একটি ছানা সাহস করে যেই না নেমেছে মাটিতে, সঙ্গে সঙ্গে মা-বাবা মুখে চাপা শব্দ তুলে তেড়ে যেতেই ছানাটি আবার ৪–৫ ফুট ওপরে উঠে গেল। মা-বাবা মাটিতে হেঁটে-দৌড়ে কী কী খাবার যে পেল, তা দেখতে পেলাম না। তবে ছয়টি রঙিন কাঠবিড়ালিকে দেখে মনে হলো, এরা প্রকৃতির শোকেসের দারুণ সুন্দর চলন্ত শোপিস। এদের প্রধান খাদ্য ফল-বাদাম-কচিপাতা-ছোট ছোট কীটপতঙ্গ। সুযোগ থাকলে পান করে তাল-খেজুরের রস। ছানাগুলোও এবারে লাফ দিয়ে মাটিতে নামল। ঘুরতে শুরু করল মা-বাবার পেছনে পেছনে। দারুণ সুন্দর দৃশ্য। কিছুক্ষণ বাদেই একটি ভুবন চিল পামগাছটির মাথার ওপর দিয়ে দুপাক ঘুরল, সঙ্গে সঙ্গে মা-বাবা কাঠবিড়ালি ডাক ছেড়ে দৌড়ে গিয়ে লাফিয়ে উঠল পামগাছটিতে। পেছনে পেছনে ছানা চারটি, গাছ বেয়ে দ্রুতবেগে চড়ে বসল গাছের মাথার বিশালকায় ঝালর বা পুষ্পমঞ্জরির ভেতরে।

একেবারে অদৃশ্য! গাছ বেয়ে প্রাণীগুলো সরলরেখায় না উঠে ঘুরপাক খেতে খেতে এ জন্য উঠল যে যাতে ভুবন চিল ডাইভ দিয়ে নখরে গাঁথতে না পারে। আমার মুগ্ধতা ভেঙে গেল। পামগাছের মাথার পুষ্পমঞ্জরি অথবা পাতার ডগার গোড়ায় বাসা আছেই। ডোরা কাঠবিড়ালি বাসা করে প্রায় সারা বছরই। সরু শুকনা ঘাস-কলাগাছের আঁশ, শুকনা ঝরা পাতা, বাঁশের শিকড়, পরিত্যক্ত পাটের আঁশ, ধানের কুটো দিয়ে এরা ছোটখাটো ফুটবল আকারের যে বাসাটি বানায়, তার প্রবেশ দরজা থাকে এক পাশে। তো, উল্লিখিত ঘটনাগুলো আমি দেখি গত ২১ জুন, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রাঙ্গণে।

ছোট-সুন্দর ও অতি চঞ্চল সুন্দর এই কাঠবিড়ালিদের নাম পাঁচডোরা কাঠবিড়ালি। ইংরেজি নাম নর্দান পাম স্কুইরাল। বৈজ্ঞানিক নাম Funambulus pennantii। এদের শরীরের মাপ ১৫ সেন্টিমিটার, লোমশ সুন্দর লেজটির মাপও ১৫ সেন্টিমিটার। ওজন ১৩৫-১৪৭ গ্রাম।

ঘাড় থেকে পিঠ হয়ে লেজের গোড়া পর্যন্ত মোট পাঁচটি সাদা রেখা টানা আছে, যা এদের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে। পিঠটার রং গাঢ় লালচে-বাদামি। বুক-পেট সাদাটে। ছোট ত্রিকোণাকার কানের রং, পায়ের রং ও মাথার রং হালকা বাদামি। মাটিতে ও গাছে সমান সচল, আত্মগোপনে পারদর্শী ও দারুণ লম্ফবিদ। এই প্রাণীদের গর্ভধারণকাল ৪০-৪৫ দিন। বাচ্চা হয় ১-৫টি। পুরুষ বাচ্চারা ১০ মাসে ও মেয়ে বাচ্চারা ৭-৮ মাসে বয়ঃপ্রাপ্ত হয়। গাছে ও মাটিতে এদের শত্রুসংখ্যা অনেক। গ্রামবাংলায় পোষা বিড়াল, বেজি, গুইসাপ, বনবিড়াল, কানাকুয়ো, হাঁড়িচাচা পাখিসহ অন্যান্য শিকারি পাখি সুযোগ পেলে তুলে নেয়। ঢাকা শহর, খুলনা বিভাগের কিছু এলাকা ও রাজশাহী বিভাগে দেখা মেলে এদের।


إرسال تعليق (0)
أحدث أقدم