মেধাবীদের পীঠস্থান বলা হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বুয়েট)। দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষার্থীরাই ভর্তি হন প্রকৌশল শিক্ষার এই বিদ্যাপীঠে। চাইলেই এখানে ভর্তি হওয়া যায় না। মেধার পরীক্ষা দিয়ে এখানে পড়ার সুযোগ পেতে হয়। দুই ধাপের এই ভর্তি পরীক্ষায় এবার সেরাদের সেরা হয়েছেন আসীর আন্জুম খান। বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া আসীর সম্প্রতি প্রকাশিত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ষষ্ঠ অবস্থানে আছেন। এ ছাড়া গাজীপুরে অবস্থিত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) ভর্তি পরীক্ষায় অষ্টম হয়েছিলেন তিনি।
আসীর আন্জুম খান প্রথম আলোকে জানালেন, তাঁর স্বপ্ন বুয়েটে পড়ার এবং তিনি বুয়েটেই ভর্তি হবেন।
বুয়েটের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়েছে গত বৃহস্পতিবার রাতে। এর আগে গত ১৮ জুন অনুষ্ঠিত হয় চূড়ান্ত ভর্তি পরীক্ষা। মোট ২ হাজার ১২৭ জনকে ভর্তির জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ও অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয়েছে। যাচাই-বাছাইয়ের পর এসব শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে ১ হাজার ২৭৯ জন ভর্তির সুযোগ পাবেন। এবার দুই ধাপে বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা হয়। এর মধ্যে গত ৪ জুন প্রাক্-নির্বাচনী পরীক্ষায় ১৭ হাজার ৩৪ জন অংশ নেন। এতে উত্তীর্ণ প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেন চূড়ান্ত পর্বের লিখিত পরীক্ষায়।
ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া আসীর আন্জুম খানের ঘরেই আছেন দুজন প্রকৌশলী। তিনি প্রথম আলোকে জানালেন, তাঁর বাবা ছিলেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার। তিনি ছিলেন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। আর তাঁর বড় ভাই আসীর ইনতিসার খান বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের প্রভাষক। তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন।আসীর আন্জুম খানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পড়াশোনার ক্ষেত্রে তাঁর বড় ভাইয়ের প্রভাবটি তাঁর ওপর ভালোভাবেই পড়েছে। আসীর আন্জুম খান এসএসসি পাস করেছেন রাজধানীর গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল থেকে। এরপর নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। আর এখন বুয়েটেই পড়তে যাচ্ছেন। তাঁর বড় ভাইও নটর ডেম কলেজে উচ্চমাধ্যমিক পড়েছিলেন। আবার তিনিও বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় ১৭তম হন এবং ইইইতে পাস করে সেখানে শিক্ষক হন।
আসীর আন্জুম খান বললেন, ‘আমার ভাই ইইইতে পড়েছেন এবং আমিও ইইইতে পড়তে চাই। পড়ালেখার ক্ষেত্রে ভাইয়াই আমার অনুপ্রেরণা। আমারও আগে থেকেই স্বপ্ন ছিল বুয়েটে পড়ার।’
এই স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রস্তুতির কথা বলতে গিয়ে তিনি জানালেন, পাঠ্যবইয়ের ওপরই জোর দিয়েছিলেন। যেকোনো স্পষ্ট ধারণা রাখার ওপর গুরুত্ব দিতেন। আর গাণিতিক বিষয়গুলো বেশি বেশি চর্চা করার চেষ্টা করতেন। অবশ্য কোচিংও করেছেন। আসীর আন্জুম খান একটি কথায় খুব গুরুত্ব দিলেন। তাঁর ভাষ্য, এক ঘণ্টা বা দুই ঘণ্টার ভর্তির পরীক্ষা আসলে সার্বিক সফলতার নির্ণায়ক হতে পারে না। অনেকেই ভর্তি পরীক্ষা দেয়, কিন্তু সবাই সমান ভালো করতে পারে না। সেই কথা বলতে গিয়ে আসীর আন্জুম খান বললেন, ‘সবারই কমবেশি সীমাবদ্ধতা আছে। আমারও আছে। তবু সীমাবদ্ধতার মধ্যে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। তবে এক ঘণ্টা, দুই ঘণ্টার ভর্তির পরীক্ষা আসলে সার্বিক সফলতার নির্ণায়ক নয়। এক ঘণ্টা বা দুই ঘণ্টার পরীক্ষায় যেকোনো কিছুই হতে পারে। তাই এখানেই থেমে থাকা যাবে না। বরং সামনে বড় সময় পড়ে আছে, সেটিকে সুন্দরমতো কাজে লাগালে ইনশা আল্লাহ ভালো কিছু হবে। আসলে যাঁরা ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম, দ্বিতীয় হন তাঁদের নিয়ে মাতামাতি বেশি থাকে। কিন্তু আমি মনে করি, যাঁরা শীর্ষ বিশ–পঞ্চাশে থাকেন তাঁদের সবার সমান সামর্থ্য রয়েছে। হয়তো ভর্তি পরীক্ষার দিন প্রথম-দ্বিতীয় হওয়া শিক্ষার্থীর ভাগ্য ভালো ছিল, আবার স্নায়ু (নার্ভ) নিয়ন্ত্রণে ছিল।’ আসীর আন্জুম খানের আত্মবিশ্বাস ছিল যে ভালো ফলই হব। হয়েছেও তা–ই। তাই ফল প্রকাশের পর খুবই খুশি। বাবা, মা, বড় ভাইসহ পরিবারের সবাই খুশি। তাঁদের খুশিতে তিনিও খুশি। বললেন, ‘আমি যাদের সঙ্গে পড়াশোনা করেছি, আমার প্রতি তাদেরও প্রত্যাশা ছিল। তাদের চাওয়া রাখতে পেরেছি, এটাও বড় পাওয়া।’মেধাবী শিক্ষার্থী আসীর আন্জুমের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায়। তবে বাবার চাকরিসূত্রে তাঁর জন্ম কুমিল্লায়। আর স্কুল-কলেজের পড়াশোনা ঢাকায়। জানালেন তিনি নিয়মিত প্রথম আলো পড়েন। তাঁর ভালো লাগে খেলার পাতা।